Patrocinados

শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে গণমাধ্যম - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

গণমাধ্যম /গণমাধ্যম ও শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা / জনমত গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা

ভূমিকা : জনগণকে প্রভাবান্বিত করার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো গণমাধ্যম। আমাদের দেশে শিক্ষার সামগ্রিক হার বিবেচনায় শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু লোকশিক্ষা কেন, প্রথাগত শিক্ষার ক্ষেত্রেও এই গণমাধ্যমগুলো শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ। এগুলো শিক্ষার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এগুলোর দ্বারা প্রাপ্ত শিক্ষা গ্রন্থগত শিক্ষার পরিপূরক। সুতরাং শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে এ শক্তি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। 
 
গণমাধ্যম : একই সঙ্গে ব্যাপক সংখ্যক জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমকে গণমাধ্যম বলা হয়। গণমাধ্যমকে জনসংযোগের উপায় হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত গণমাধ্যমের মধ্যে জনপ্রিয় হলো রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, অনলাইন বা ইন্টারনেট মিডিয়া ইত্যাদি। এসব গণমাধ্যম ব্যবহার করে অনেক ঘরের মানুষের কাছেও খুব সহজেই বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়। অবশ্য গণমাধ্যমের সহায়তায় জনগণের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ সংযোগ সম্ভব নয়। তাই তাৎক্ষণিক মতামতও পাওয়া যায় না। জনগণের ফিডব্যাক পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তবে বিশেষ ব্যবস্থাধীনে ক্ষেত্রেবিশেষে তাৎক্ষণিক মতামত সংগ্রহের ব্যবস্থা করা যায়। গণমাধ্যম জনগণের বিনোদন মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। গণমাধ্যমে কোনো দেশ, সমাজ, গোষ্ঠীর শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটে। ফলে এক দেশের সংস্কৃতি অন্য দেশে পৌঁছে যায়। 

শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে গণমাধ্যম : বর্তমান যুগে বিজ্ঞানের বদৌলতে শিক্ষা-বিস্তারে বিশিষ্ট কয়েকটি ‘মাস মিডিয়া’ বা গণমাধ্যম আমাদের বিশেষ সহায়ক হতে পারে। এসব গণমাধ্যমগুলো হচ্ছে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ও সিনেমা। যারা স্বল্পশিক্ষিত বা অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন, সংবাদপত্র তাদের শিক্ষা বা জ্ঞানবুদ্ধির পুঁজিকে বাড়ানোর শক্তি রাখে। আর রেডিও, টেলিভিশন ও সিনেমা -এ তিনটি মাধ্যম দ্বারা সম্পূর্ণ নিরক্ষররাও উপকৃত হতে সক্ষম। তবে চলচ্চিত্রে দর্শকরা নিজেদের পছন্দ বা অভিরুচি অনুযায়ী ছবি দেখে থাকে। রেডিওতে শ্রোতারা শুনে শিখতে পারে, জানতে পারে অনেক নতুন নতুন বিষয়। বিষয় নির্ধারণের সুযোগ রেডিওর ক্ষেত্রে আছে। তাই বেশিরভাগ প্রোগ্রাম নির্ধারিত থাকে বলে শ্রোতাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধেও বহু বিষয় শুনতে হয়। অন্যদিকে, টেলিভিশনের ক্ষেত্রে শোনার সঙ্গে সঙ্গে দেখারও বিরাট ভূমিকা থাকে বলে শিক্ষার এই গণমাধ্যমটি আজকের দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এক কথায়, সংবাদপত্রের শিক্ষা পড়ে পড়ে, রেডিও শুনে শুনে, আর টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের বেলায় তা দেখেশুনে। সম্প্রতি ইন্টারনেট তথা অনলাইন মাধ্যমও শিক্ষা-বিস্তারে গণমাধ্যম হিসেবে বিশেষ কাজ করছে। 
 
শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্র : গণশিক্ষার অন্যতম বলিষ্ঠ হাতিয়ার হলো সংবাদপত্র। সংবাদপত্র প্রতিনিয়ত অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে জনগণের কাছে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য উপস্থাপন করে। স্বাধীন মতামত প্রকাশ করে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সংবাদপত্র জনশিক্ষাকে সম্প্রসারিত করে। সংবাদপত্র সামাজিক চিত্র ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের তত্ত্ববহুল অসংখ্য বিষয় জনসমক্ষে তুলে ধরে। এটা জনসচেতনা সৃষ্টি করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তার করতে হলে জনগণকে ব্যাপক ভিত্তিতে ন্যূনতম অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। 
 
শিক্ষা বিস্তারে বেতার : আধুনিক বিজ্ঞান-নির্ভর যুগে গণশিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে বেতার। ধনীর বিশাল অট্টালিকা ও রাজপ্রাসাদ থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার দরিদ্র কুটির পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে বেতার। সুতরাং এ মাধ্যমটি শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখতে পারে। বেতার অতি সহজেই জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারে দেশ-বিদেশের নানা খবর ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিত্যনতুন কথা। আকর্ষণীয় ও চমকপ্রদ শিক্ষা অনুষ্ঠানের সম্প্রচার করে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়-মনকে গভীরভাবে আন্দোলিত করতে পারে বেতার। দূর শিক্ষণের কার্যক্রমে বাংলাদেশেও বেতারকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। 
 
শিক্ষা বিস্থারে টেলিভিশন : টেলিভিশন বা দূরদর্শন বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। বিশ্বের সর্বত্রই আজ বেতারের মতো টেলিভিশনের ছড়াছড়ি। গণশিক্ষা বিস্তারে এটি একটি শক্তিশালী মাধ্যম। বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত এ শক্তির প্রভাব অপ্রতিরোধ্য। বেতারের সকল ঘটনাপ্রবাহ ও শিক্ষণীয় পর্ব অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে সচিত্র তুলে ধরতে পারে। টেলিভিশন। শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারের মাধ্যমে জাতি গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা ও বিস্ময়কর অবদান রাখতে পারে টেলিভিশন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ বিষয়ের পাশাপাশি গণশিক্ষা কর্মসূচি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের মতো বাস্তব চিত্রে উপস্থাপন করতে পারে টেলিভিশন। ঘরোয়া পরিবেশে চলচ্চিত্রের আনন্দ উপভোগের সুযোগ এনে দেয় টেলিভিশন। 
 
শিক্ষা বিস্তারে ইন্টারনেট : বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের যেকোনো বিষয় সম্পর্কে জানা যায় মুহূর্তের মধ্যেই। কোনো অজানা বিষয় লিখে সার্চ দিলেই জানা যায় সেই বিষয়ের সব কিছু। আজকাল অনলাইনে ক্লাসরুম ভিডিও আকারে প্রকাশ করে দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরাও সেই ক্লাসে অংশগ্রহণ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ইউটিউব থেকে যেকোনো বিষয়ে শিক্ষা, সংবাদ বা তথ্যচিত্র ভিডিও আকারে দেখা যায়। 
 
দেশাত্মবোধের জাগরণে গণমাধ্যম : শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জনগণকে জাতীয় চেতনা ও দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত করা। গণমাধ্যমগুলো শিক্ষার এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রসমূহ দেশের জনগণকে স্বাধীনতা ও দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত করে। দেশদ্রোহী বিভিন্ন শক্তি ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম। পাশাপাশি এটা দেশের জন্য কল্যাণকর বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্ব তুলে ধরে। এজন্য বলা হয়েছে – ‘Freedom and sovereignty of people is dependent on mass media.’ 
 
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক শিক্ষা : ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘Religion and culture are the two ideal power of a nation.’ ধর্ম ও সংস্কৃতি ছাড়া কোনো জাতি বেঁচে থাকতে পারে না। শিক্ষার অন্যতম দিক হলো ধর্ম ও সংস্কৃতির চর্চা। ধর্ম ও সংস্কৃতির বিস্তারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম। গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন দেশ ও জাতির আচার-আচরণ, কৃষ্টি-সভ্যতা, ধর্ম-সংস্কৃতি ইত্যাদির সচিত্র বিবরণ তুলে ধরে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সুস্থ বিকাশের মাধ্যমে আদর্শ জাতি গঠন সম্ভব। তাই গণমাধ্যমগুলো এ ব্যাপারে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে থাকে। পক্ষান্তরে, গণমাধ্যমগুলো যদি ধর্মের নামে অর্ধম, অনাচার ও সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটায় তাহলে দেশ ও জাতি এক নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। 
 
সামাজিক ও রাজনৈতিক জ্ঞান : যে কোনো দেশ ও জাতি সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন শিক্ষার অপরিহার্য দিক। বিশ্বের কোন রাষ্ট্র কিভাবে চলছে, কোন রাজনৈতিক শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়, কোন দেশ বা জাতির সামাজিকতা কেমন ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া প্রতিটি সচেতন নাগরিকের জন্য অবশ্য কর্তব্য। আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে রাজনৈতিক শক্তি কর্তৃক। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘In the modern world the earth is directed by political power’ গণমাধ্যমগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতির সামাজিক ও রাজনৈতিক জ্ঞান বিস্তারে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। 
 
উপসংহার : শিক্ষার প্রভাব ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ-সর্বক্ষেত্রে-সর্বজনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিক্ষার সুফল বর্তায়। গণশিক্ষার সবচেয়ে বড় ভূমিকা গণমাধ্যমের, এতে পাঠক্রম-নির্দিষ্ট গ্রন্থের স্থান নেই। কোনো ক্ষেত্রে পড়া, কোনো ক্ষেত্রে শোনা, কোনো ক্ষেত্রে যুগপৎ শোনা ও দেখার সাহায্যে গণমাধ্যম থেকে শিক্ষণীয় বিষয় মনে স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণায় ও কৌতূহলে আনন্দাশ্রিত হয়ে বহুজনের হৃদয়বেদ্য হয়। এক এক পশলা বৃষ্টির পানি এক এক জনপদের বিশাল অঞ্চল যেমন রসসিক্ত হয়ে শস্য-প্রসবিনী হয়ে ওঠে, অনেকটা তেমনই। ব্যষ্টি নিয়ে সমষ্টি হলেও গণশিক্ষার সমষ্টির শিক্ষাই মুখ্য। উন্নত বিশ্বে জনমত গঠন, সমাজ পরিশোধন ও মুক্ত চিন্তার বিকাশ সাধনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ অবদান পালন করে। বাংলাদেশে বেতার-টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে এখনো যথার্থ মানসম্পন্নহয়ে ওঠেনি। চলচ্চিত্র নগ্নতা ও অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট। সংবাদপত্রগুলো মোটামুটি গণমুখী। তাই জাতি গঠনের ক্ষেত্রে আমাদেরগণমাধ্যমসমূহ কাঙ্ক্ষিত অবদান রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
Like
2
Patrocinados
Upgrade to Pro
Choose the Plan That's Right for You
Read More