إعلان مُمول

এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি / রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি। - ভাবসম্প্রসারণ

এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।

 

মূলভাব : অর্থশালী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা যে কোনো পন্থায় বা কৌশলে আরও অর্থ-বিত্তের মালিক হতে চায়। তাদের অর্থ লাভের চাহিদা এবং সম্পদ লাভের আকাঙ্ক্ষার যেন শেষ নেই।
 
সম্প্রসারিত ভাব : জীবন সমস্যাসঙ্কুল ও সংকটময়। বেঁচে থাকার জন্যে মানুষকে সেই সমস্যা ও সংকটের মোকাবেলা করতে হয়। প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ ছাড়া এ সব সমস্যা ও সংকটের মোবাবেলা করা সম্ভব নয়। এজন্যে প্রত্যেকেরই অর্থ-বিত্তের দরকার আছে, যা দিয়ে তারা তাদের অভাব ও চাহিদা মিটাবে। কিন্তু সব মানুষই সমান অর্থ-বিত্তের মালিক নয়। সমাজে কেউ বিপুল অর্থ-সম্পদের অধিকারী, আবার কারো কোনো অর্থ-বিত্তই নেই। পার্থিব জীবনে এই সামাজিক ভেদাভেদ শারীরিক শক্তি, ক্ষমতা ও প্রভাবের পার্থক্যের কারণেই হয়েছে। যে কারণে কেউ ধনী, কেউ গরিব, কেউ সম্পদশালী, কেউ নিঃস্ব। বেঁচে থাকার সামান্য অবলম্বনটুকুও অনেকের নেই। সমাজে তারাই দুর্বল, অসহায়, দরিদ্র এবং অবহেলিত। ধনী ও বিত্তবান ব্যক্তিরা এসব দরিদ্র, দুর্বল মানুষকে কৌশলে ঠকিয়ে, বল প্রয়োগ করে অথবা প্রভাবিত করে শোষণ করে। প্রতারণা ও বাঞ্চনার মাধ্যমে দরিদ্রদের অর্থ-সম্পদ কুক্ষিগত করে ধনীরা অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। তারপরও অর্থ-বিত্তের প্রতি তাদের লোভের শেষ নেই। তাদের আকাঙ্ক্ষা অসীম, অভাব সীমাহীন আর চাহিদা বেপরোয়া। তাদের মনের ক্ষুধার নিবৃত্তি নেই। এ প্রকৃতির মানুষের সারাক্ষণের চিন্তা চাই-চাই-আরও চাই। যাদের অনেক আছে তারাই আরও বেশি চায়। আর এ চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করত জুলুম-অত্যাচার, ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। অক্টোপাশের মত চারদিকে ঘিরে ধরে দরিদ্র মানুষের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিতে তারা কিছুমাত্র দ্বিধা করে না। একটু মায়া-মমতা, একটু সহানুভূতি, একটু বিবেচনাবোধ শোষিতের জন্যে অবশিষ্ট থাকে না। কৃষিজীবী ও শ্রমজীবীরা যেন তাদের কাছে পণ্যের মতো, ভোগ করে উচ্ছিষ্টটুকু ফেলে দেয়। সম্পদ বাড়ানোর এমন দুর্দমনীয় নেশা কার্যকর করতে সত্য-মিথ্যা, ভালোমন্দ ইত্যাদি বিষয়কে দূরে ঠেলে বিত্ত ও বৈভবের মোহে তারা দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলে।
 
অনাহারক্লিষ্ট দরিদ্র মানুষ নিত্যদিন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের শিকার। তারা কষ্ট করে। দুঃখে তাদের জীবন গড়া। কিন্তু তারপরও ধনীদের বিত্ত-বৈভবের দিকে তারা লোভী দৃষ্টিতে তাকায় না। ’রাজা, জমিদার, মহাজনদের বিলাসবহুল জীবনের খোঁজ-খবর রাখে না। ভাঙা কুটিরে একবেলা আধপেটা খেয়ে হাসি-আনন্দে কাটিয়ে দেয় অসহায় মানুষ। অসৎ, অনৈতিক, অমানবিক কাজকর্মকে তারা ঘৃণা করে। কোনোরকমে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার মধ্যেই তাদের সুখ এবং শান্তি। অথচ এই নিরিবিলি অভাব-অনটনের শান্তিতেও বাধা সৃষ্টি করে ধনিক শ্রেণী। তাদের লোভী দৃষ্টি গ্রাস করে গরিবের ভিটে মাটি, সামান্য জমিজিরাত। এভাবেই ‘রাজার হস্ত’ অর্থাৎ বিত্তশালীরা ’করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’। কৌশলে চুরি করে, শোষণ করেই যাদের ভুরি ভুরি আছে তারা আরও ধনী হয়।
 
মন্তব্য : সারা পৃথিবী দুঃখী মানুষের আহাজারি আর দীর্ঘনিঃশ্বাসে ভরে উঠেছে। শ্রেণীবিভক্ত সমাজ ব্যবস্থায় নির্মম শিকার হয়ে শোষিত-বঞ্চিত মানুষ শুধুই কাঁদে আর অভিশাপ দেয়। কিন্তু আর কতদিন? কতদিন ধনী আরও ধনী হবে, গরিব ক্রমশ নিঃস্ব হতে থাকবে? পেশীশক্তি আর এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকড় উপড়ে ফেলার সময় এখনই। মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক সমতা বিধানের সুযোগ সৃষ্টি করা ধনীদেরই নৈতিক দায়িত্ব।
Like
Love
2
إعلان مُمول
ترقية الحساب
اختر الخطة التي تناسبك
إقرأ المزيد