Gesponsert

সৎসঙ্গ / সৎসঙ্গী নির্বাচন / সৎসঙ্গের প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা : সঙ্গপ্রিয়তা মানুষের সহজাত একটি বিষেয়। সঙ্গ ছাড়া মানুষ এক মুহূর্তও চলতে পারে না। সঙ্গীর কামনা মানুষের চিরন্তন প্রবৃত্তি। তাই তো সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষ সঙ্গী-সাথী নিয়ে জীবন সাজিয়েছে। তবে সঙ্গী নির্বাচনে ভুল হলে মানুষের জীবনে নানা বিড়ম্বনা দেখা দেয়। 
 
সৎসঙ্গের স্বরূপ : মানুষের সঙ্গী চাই, বন্ধু চাই, কিন্তু সব মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব কাম্য হতে পারে না। মানুষ সহজেই অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। তাই সঙ্গীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সহজেই মানুষকে সুপথ বা কুপথে নিতে পারে। সঙ্গ প্রভাবের কথা মনে রেখে সৎ ও নিঃস্বার্থ ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে সঙ্গলাভ করা যায়। কেননা অনেক প্রতিভাবান মানুষকেও দেখা গেছে অসৎ সঙ্গের প্রভাবে অধঃপতনের গভীরে তলিয়ে যেতে। আবার অনেক অধঃপতিত ব্যক্তিকেও সচ্চরিত্র মানুষের সঙ্গলাভের মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে দেখা যায়। 
 
সঙ্গী নির্বাচনে সতর্কতা : সমাজে নানা শ্রেণির মানুষের বসবাস। ঠক, প্রতারক ও বিপথগামী মানুষের অভাব নেই আমাদের সমাজে। আবার কিছু মানুষ রয়েছে অন্ধকার আকাশে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো। সঙ্গী বা বন্ধু হিসেবে এই উজ্জ্বল-আলোকিত মানুষদেরই কামনা করতে হবে। দুষ্ট লোকেরা সাধারণত মিষ্টি কথায় মন গলাতে চায়।
তারা বন্ধুত্বের ছদ্মাবরণে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যস্ত। তাই এসব লোকের সংস্পর্শ সজ্ঞানে পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে ‘একলা চলো’ নীতি গ্রহণ করতে হবে, তবুও দুষ্ট লোকের কাছে যাওয়া উচিত নয়।
কথায় আছে ‘দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য’। কাজেই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার বাইরের রূপ বা জ্ঞনগরিমা দেখে মুদ্ধ হলে চলবে না। দেখতে হবে তার মধ্যে সততা আছে কি না, তার মনের জগৎটি আলোকিত কি না। দার্শনিক ইমাম গায্যলী অসৎ, স্বার্থপর ও ধর্মহীন মানুষের সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। মহানবি হযরত মুহম্মদ (স) বলেছেন-
“কুসংসর্গে বাস করার চেয়ে একা বসে থাকা ভালো এবং একাকী বসে থাকা অপেক্ষা সৎসঙ্গে থাকা ভালো, অসৎ বাক্যালাপের চেয়ে চুপ থাকা ভালো এবং চুপ করে থাকার চেয়ে বিদ্যান্বেষীর সঙ্গে বাক্যালাপ করা ভালো।” 
 
ছাত্রজীবনে সৎসঙ্গের গুরুত্ব : ছাত্রজীবন মানুষের মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়। বয়সগত কারণে এ বয়সে মানুষের সঙ্গ কামনা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়। অভিজ্ঞতা ও বাস্তব জ্ঞানের অভাবে এ বয়সে বন্ধুর দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হয় সহজেই। অনেক তরুণ খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে দুষ্কর্মে জড়িয়ে পড়ে। পরিণামে নিজের জীবন ও পরিবারকে নিয়ে যায় ধ্বংসের দিকে। আজকাল ছাত্র ও তরুণ সমাজের মধ্যে মাদকদ্রব্যের নেশা, সন্ত্রাস ও অসামাজিক কার্যকলাপের যে প্রবণতা লক্ষ করা যায়, তার জন্যে তাদের সঙ্গদোষই অনেকাংশে দায়ী।
তাই ছাত্রদের নিজেদের যেমন সঙ্গী নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে, তেমনি অভিভাবকদেরও লক্ষ রাখতে হবে যে তাদের সন্তান কার সাথে মেলামেশা করে। সঙ্গদোষে যাতে বিপথগামী না হয় সেজন্যে সন্তানদের সচেতন করে তোলা অভিভাবক ও শিক্ষকদের দায়িত্ব। যেসব ছাত্র পড়াশোনায় অমনোযোগী, মাদকাসক্ত বা সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তাদের সাথে কিছুতেই মেলামেশা করা উচিত হবে না। ছাত্রদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে- 
‘সৎসঙ্গে স্বর্গবাস 
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ 
 
উপসংহার : মহামানবদের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁরা তাঁদের মঙ্গলচেতনা দ্বারা অন্যদের প্রভাবিত করেছেন। নিজের জ্ঞানের আলোয় অন্যদের উদ্ভাসিত করেছেন। সেজন্য তাদের সঙ্গলাভে মানুষ ছিল উন্মুখ। তারা ছিলেন মানুষের প্রকৃত বন্ধু। কোনো স্বার্থ, লোভ বা প্রত্যাশায় মানুষকে কাছে টেনে নেন নি। তাই আমাদের কারও সঙ্গলাভের আগেই তার উদ্দেশ্য ও চরিত্র সম্পর্কে অবহিত হতে হবে।
Like
Love
2
Gesponsert
Upgrade to Pro
Choose the Plan That's Right for You
Read More