Gesponsert

প্রবন্ধ । কওমি মাদরাসা কী ও কেন ?

! الحمد لوليه والصلاة والسلام على اهلها اما بعد
قل هل يستوي الذين يعلمون والذين لا يعلمون،
وقال رسول الله – صلى الله عليه وسلم- خير الخيار خيار العلماء

 

প্রথমত, এটা জানা আবশ্যক যে, বর্তমান বিশ্বে বিদ্যমান কওমি মাদ্রাসাগুলো অন্যান্য জাগতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা আয়-উপার্জনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত কোনো সংস্থা নয়। বরং, এই মাদ্রাসাগুলো বিশেষভাবে এমন কিছু মহৎ ব্যক্তি তৈরির লক্ষ্যে গঠিত, যারা চিন্তা, চেতনা, ফিকির, ব্যথা, বেদনা এবং আচার-আচরণে অন্যদের সাথে বসবাস করেও সর্বদা আধ্যাত্মিক জগতে বিচরণ করবেন। তাদের সম্পর্ক হবে আল্লাহ তায়ালার সাথে, এবং তাদের জীবন পরিচালিত হবে শরীয়তের নীতি অনুযায়ী। কওমি মাদ্রাসার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো এমন উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি তৈরি করা।

অতএব, এই সকল কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য হলো সেই বিশেষ চিন্তা ও মানসিকতার বীজ নিজেদের অন্তরে রোপণ করা এবং জ্ঞান ও আমলের ক্ষেত্রে ইখলাসের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া।

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ হবেন যুদ্ধের ময়দানের সৈনিকের ন্যায়, যাদের মধ্যে আরামপ্রিয়তা, উন্নত আহার, ভালো পোশাক ও বিলাসী জীবনের মানসিকতা থাকবে না। বরং, একজন দেশপ্রেমিক, জাতিপ্রেমিক ও ধর্মপ্রেমিক সৈনিক যেমন বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ হয়ে লড়াই করে যান, তেমনি এই মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমৃত্যু নিয়োজিত থাকবেন।

তাদের চিন্তা, ফিকির ও আনুগত্য সর্বদা এই কথারই প্রমাণ দেবে: اينقص الدين وانا حي ?

অর্থাৎ, আল্লাহর দ্বীন দুনিয়া থেকে মিটে যাবে আর আমি বেঁচে থাকব, এমনটা কখনোই হতে পারে না। প্রয়োজনে আমি আমার সবকিছু উৎসর্গ করে হলেও আল্লাহর দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করব ইনশাআল্লাহ।

এর জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন নিয়তের পরিশুদ্ধি। এরপর আল্লাহ তায়ালার ফরজ হুকুম আন্তরিকতার সাথে পালন করা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করে খাঁটি আশেক হিসেবে জীবন গঠন করা এবং যাবতীয় ছোট-বড় গুনাহ পরিহার করার পাশাপাশি সমাজের সকল প্রকার অপসংস্কৃতি ও কুপ্রথা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে একজন বাস্তবমুখী জ্ঞানী ও আমলকারী হিসেবে সজ্জিত করা। তখনই উপরোল্লিখিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।

এজন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন এই ধরনের মানসিকতার মাদ্রাসা এবং এই মানসিকতার শিক্ষকের সাহচর্য।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “অবশ্যই আলেমের জন্য আসমান ও জমিনের সকল সৃষ্টি, এমনকি পানির মাছ ও পিঁপড়ার গর্তের পিঁপড়া পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে।”

তিনি আরও বলেছেন, “নিশ্চয়ই ফেরেশতারা তালেবে ইলমের সন্তুষ্টির জন্য তাদের ডানা বিছিয়ে দেন।”

লক্ষ্য করার বিষয় হলো, এই নশ্বর পৃথিবীতে অন্য কোনো সম্প্রদায়ের জন্য এই সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি। একমাত্র আলেম ও তালেবে ইলমদের জন্য এই সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে।

অতএব, সকল আলেম ও তালেবে ইলমের উচিত এই মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং সর্বদা এর উপলব্ধি অন্তরে ধারণ করা।

ফার্সি ভাষার একটি বিখ্যাত উক্তি:

قیمت ہر چیز را دانی کہ چیست۔
قیمت خود راندانی احمق ایست

“তুমি সব জিনিসের মূল্য জানো, সেটা কী? কিন্তু নিজের মূল্য যদি না জানো, তবে তুমিই সবচেয়ে বড় নির্বোধ।”

অতএব, আমাদের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি অনুধাবন করা উচিত যে, তাদের মর্যাদা কত উচ্চ, যাদের ওসিলায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই নশ্বর পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছেন এবং রাখবেন। অন্যথায় এই পৃথিবী স্থির থাকার যোগ্য নয়।

সেজন্য আমাদের কওমি মাদ্রাসার সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য হলো, সেরূপ যোগ্য মুরব্বির অধীনে সান্নিধ্য ও সাহচর্য লাভ করে পরামর্শের মাধ্যমে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া।

পরামর্শের সাথে চলার অর্থ হলো, সেই উপযুক্ত মুরব্বি যেভাবে নির্দেশ দেন—তা আমার চাহিদামতো হোক বা না হোক—তা মেনে চলা। যেটিকে কুরআনের ভাষায় বলা হয়, “আমরা শুনলাম এবং মানলাম।” অর্থাৎ, শোনার সাথে সাথেই মেনে নেওয়া, যেমন ছিল সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের মন ও জীবনধারা।

অন্যথায়, পঙ্গপালের মতো বাহ্যিকভাবে শুধুমাত্র মাদ্রাসার দিকে ধাবিত হওয়াই যথেষ্ট নয়। মাদ্রাসায় কেন আসা হলো, কী পড়ালেখা করা হলো, এ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণাও যদি না থাকে—অর্থাৎ, মাদ্রাসায় আসার দরকার তাই আসছি, পড়ালেখা করার দরকার তাই করছি—তবে মূল লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে থাকা হবে।

আর এভাবে যদি হাজারো লাখো মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে, তাহলে তার মূল ফায়দা ও লাভ প্রায় শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়াবে (নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক)।

বরং, উল্লেখিত গুণাবলীতে আবশ্যিকভাবে গুণান্বিত হয়ে জীবন গড়তে হবে, তখনই মূল উদ্দেশ্যে সফলতা আসবে।

সারকথা হলো: প্রত্যেকে নিজ নিজ আত্মার সংশোধনীর সাথে ব্যক্তি গঠন ও সংশোধন, পরিবার ও সমাজ গঠন ও সংশোধন, অতঃপর দেশ, জাতি ও পৃথিবী গঠন ও সংশোধন করা। এগুলো পালনের মাধ্যমেই ইহকাল ও পরকাল সুন্দর ও সমৃদ্ধ হবে।

আল্লাহ পাক সকলকে তৌফিক দান করুন। আমীন।

Like
Love
2
Gesponsert
Upgrade to Pro
Choose the Plan That's Right for You
Read More