Προωθημένο

সভ্যতা বিনির্মাণে নারীর অবদান - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা : পৃথিবীতে নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানবসভ্যতার উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। নারীরা কন্যা-জায়া-জননীরূপে সর্বদা পুরুষের সঙ্গে থেকে সভ্যতা বিনির্মাণে পুরুষকে উৎসাহ ও প্রেরণা জুগিয়েছে। তাই সভ্যতা বিনির্মাণে নারীর অবদান অনস্বীকার্য।
 
নারী শিক্ষার অবদান : সভ্যতা বিনির্মাণে শিক্ষিত নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। অতীত কাল থেকেই নারীরা মানবসভ্যতার উন্নতি ও অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে শিক্ষিত নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি সমান তালে অবদান রাখছে। একজন শিক্ষিত মা-ই তার সন্তানকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলে সভ্যতা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ আজকের শিশুই আগামী দিনের জাতির কর্ণধার। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের প্রভাবের কথা উল্লেখ করে নেপোলিয়ন বলেছেন- “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।” 
 
রাজনীতিতে নারী : রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে নারী। শুধু বাংলাদেশ নয় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেই নারীর রয়েছে সক্রিয় অংশগ্রহণ। ষাটের দশক থেকে বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন নারীরা। দৃষ্টাত্তস্বরূপ ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, পাকিস্তানের বেনজীর ভুট্টো। ফিলিপাইনের কোরাজন একুইনো ও গ্লোরিয়া অ্যারোইয়া, শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েক ও চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ, আর্জেন্টিনার ইসাবেলা পেরন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল প্রমুখ। সবাই নিজ নিজ অবস্থানে সার্থকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। 
 
অর্থনীতিতে নারীর অবদান : আমাদের সমাজের অর্ধাংশ হলো নারী। তাই নারীকে বাদ দিয়ে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। সভ্যতার বিকাশের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে নারীরা শিক্ষা বুদ্ধি, জনশীলতায় পুরুষের পাশাপাশি অগ্রসর হয়ে চলেছে। তবে বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো নারী। আমাদের দেশের অর্থনীতির দিকে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, এদেশের অর্থনীতিতেও নারীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। গৃহস্থালি কর্মকাণ্ড ছাড়াও অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা অবদান রাখছে। কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে পুরুষ বেশি জড়িত হলেও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিশাল অংশে নারীরা বেশি ভূমিকা রাখে। এছাড়াও নারীরা বাড়ির আঙ্গিনায় শাকসবজি, ফলমূল চাষ করছে। পোশাক শিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের মূল চালিকাশক্তিই নারী। ব্যবসায় ক্ষেত্রেও নারীরা পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৩৫ শতাংশই নারী। এসব ক্ষেত্র ছাড়াও হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া প্রভৃতি পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে নারী সরাসরি জড়িত। এসব শিল্পের প্রধান। কাজগুলো নারীরাই করে থাকে। তাই বলা যায় অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা একদিকে যেমন নারীকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছে। অপরদিকে তেমনই সভ্যতার বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। 
 
জাতিগঠনে নারীসমাজের অবদান : আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক, উন্নত ও প্রগতিশীল জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুদূর অতীতে পরিবার গঠনে নারীরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা শুরুর পর থেকে নারীকে কোণঠাসা করা হলেও তাদের গঠনমূলক ও কল্যাণকর ভূমিকা খুব বেশি সীমিত হয়নি। বরং পুরুষের পাশাপাশি থেকে তারা সভ্যতার অগ্রগতিতে সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছে। বর্তমানে নারী কেবল স্ত্রী-কন্যা-মা নয়, ব্যক্তিত্ববোধে জাগ্রত স্বতন্ত্র সত্তা। তাই সমাজ উন্নয়নের স্রোতধারায় তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতিগঠনে যথাযথ ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেশ ও জাতিগঠনে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে চলেছে। দেশের প্রশাসনের প্রতিটি সেক্টরে যেমন তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ আছে, তেমনই শিল্পকারাখানা, গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মহাকাশ অভিযানসহ সবক্ষেত্রেই নারীদের অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। 
 
আন্দোলন ও যুদ্ধক্ষেত্রে নারীসমাজের অবদান : নারীসমাজ দেশের সম্মান ও মানুষের মুক্তির জন্য শত্রুপক্ষের মোকাবিলায় অবতীর্ণ হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। তারা পুরুষদের পাশাপাশি থেকে শক্তি, সাহস, প্রেরণা জুগিয়েছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ব্রিটিশ আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার; তেভাগা আন্দোলনে ইলা মিত্র। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে হালিমা বেগম, রওশন আরা প্রমুখ। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সিতারা বেগম, তারামন বিবি বীরপ্রতীক প্রমুখ নারীর দৃপ্ত পদচারণা আমাদের জাতীয় জীবনে অনুপ্রেরণার অত্যুজ্জ্বল উৎস। 
 
উপসংহার : যেকোনো দেশ বা জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমান সময়ে নারীর স্বতন্ত্র সত্তা সর্বজনস্বীকৃত। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এখন সমাজের সকল কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। আজ সর্বত্র নারীরা সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে পুরুষের সঙ্গে কাধ কাঁধে মিলিয়ে তারা সভ্যতার বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
Like
1
Προωθημένο
Upgrade to Pro
διάλεξε το πλάνο που σου ταιριάζει
Διαβάζω περισσότερα