Patrocinado

মানুষ ও বিজ্ঞান - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রকৃতির অবাধ রাজ্যে নিরুপায় মানুষ : একদিন প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ ছিল সম্পূর্ণ স্বাধীন। সে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে প্রকৃতিকে জয় করার চেষ্টা করেছে। সে ছিল এক ভয়ঙ্কর প্রতিকূল পরিবেশ। লক্ষ লক্ষ বছর অতিক্রম করে মানুষ একদিন বিজ্ঞানের বলে সভ্যতার নবদিগন্ত উন্মোচিত করল। সেই থেকে বিজ্ঞান ও মানুষ হল একে অপরের সম্পূরক। 
 
বিজ্ঞান অতল আধাঁর থেকে আলোর দিগন্তে : মানব সমাজের ইতিহাসে পাওয়া যায়, মানুষ যেদিন আগুন আবিষ্কার করতে পেরেছিল সে দিনটি ছিল তার বড় শুভদিন। বিরূপ প্রকৃতির মোকাবেলায় মানুষের হাতে আগুন ছিল সর্বপ্রথম আণবিক শক্তিস্বরূপ। তারপর কালের যাত্রাপথে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারে সমাজ ও সভ্যতা হয়েছে সমৃদ্ধ। মানুষ হয়েছে সর্বজয়ী মহান সত্তা। মানুষের অদম্য সাধনা গোটা বিশ্বের নব সৃষ্টির উৎপাদন ও নির্মাণের মহা সূচনা ঘটিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানের জাদুর সংস্পর্শেই মানবজীবন ও জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঞ্চারিত হয়েছে নতুন গতি। আজকে জলে স্থলে ও অন্তরীক্ষে বিজ্ঞানের উন্মেষ ও বিজয় পতাকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রযুক্তি দেখা দিচ্ছে নিত্যনতুন। বিজ্ঞান আজ মানুষের নিত্যসঙ্গী, মহাশক্তি ও নির্ভরযোগ্য মিত্র। তাই, আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ বলে সর্বজনস্বীকৃত। 
 
উৎপাদনে বিজ্ঞান : মানুষের প্রাত্যহিক প্রয়োজন পূরণে বিজ্ঞান এনে দিয়েছে যান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতি। কৃষিকাজে কলের লাঙল, সেচকল, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, বীজ বিশোধন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া আধুনিক বিজ্ঞানের আশ্চর্য অবদান। মানুষ প্রকৃতিকে বিজ্ঞানের বলে পরাজিত ক্রীতদাসে পরিণত করেছে। ঊষর মরুভূমিকে শস্য-শ্যামল করতে কৃষিবিজ্ঞান সক্ষম হয়েছে। তাই, উন্নত দেশগুলো কৃষিকাজকে রীতিমত কৃষিবিজ্ঞান ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে পরিণত করেছে। 
 
শিল্প উৎপাদন : আধুনিককালের আবিষ্কার শিল্প বিপ্লবের সূচনা করে ইউরোপে। রাইট ও জেমস্ ওয়াটের কাছে সেজন্য আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা রয়েছে। রূপকথার আজব দৈত্যের মত মহাশক্তি নিয়ে এসব শিল্প কারখানার যন্ত্রপাতি মানুষের প্রাত্যহিক প্রয়োজন পূরণের সমস্ত দ্রব্যই তৈরি করে দিচ্ছে অতি সহজে ও স্বল্প সময়ে। আমাদের ব্যবহার্য প্রায় প্রতিটি দ্রব্যই শিল্পজাত। 
 
বণ্টনে ও পরিবহনে বিজ্ঞান : কালের জাহাজ আবিষ্কারের ফলে সমুদ্র জয়ী মানুষ বিশ্বব্যাপী কালের তৈরি দ্রব্য পৌঁছে দিয়েছে। স্থলপথে রেল ও মোটর গাড়ি এবং আকাশ পথে বিমান প্রতিদিন মানুষ ও মালপত্র বহন করছে। এক দেশের উৎপন্ন দ্রব্য বিশ্বের যে-কোন প্রান্তে আজ পৌঁছে যাচ্ছে এসব যানবাহনের কল্যাণে বণ্টনে সহায়তা করছে বিজ্ঞান।
 
অন্যান্য প্রয়োজনে বিজ্ঞান : খাদ্য ও বস্ত্রের পরেই মানুষের জীবনের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের প্রয়োজন দেখা দেয়। আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র, লেখার কাগজ কালি ও বিচিত্র লেখনী আবিষ্কারের ফলে জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার প্রসারতা যেমন দেখা দিয়েছে, তেমনি শিক্ষাদান ব্যবস্থায় পাচ্ছে পূর্ণ রূপ। আধুনিক কালে রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র ছাড়াও আমাদের মৃত্যুঞ্জয়ী জীবন রক্ষাকারী আশ্চর্য ধরনের সব ঔষধ, প্রতিষেধক টিকা ও ইনজেকশন ছাড়াও রোগ নিরাময়ের ঔষধ পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, ক্লোরোমাইসিন প্রভৃতি ঔষধ মানুষকে এনে দিয়েছে জীবন হাতিয়ার রূপ। নিত্য নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিও যন্ত্রপাতির আবিষ্কার এখনও চলছে। গৃহনির্মাণে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের বিকাশ ইট, সিমেন্ট ও কারিগরি বিদ্যার প্রয়োগ নতুন পযুক্তির দ্বার উন্মোচন করেছে। এখন আর পাহাড়ের গুহা নয়, শহর-বন্দরে মানুষ গগনচুম্বী প্রাসাদে বসবাস ও কাজকর্ম করতে সমর্থ হচ্ছে। বিদ্যুৎচালিত লিফট্ উঠানামার কষ্ট লাঘব করছে। 
 
যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন যানবাহন ছাড়াও টেলিফোন, টেলিগ্রাফ অপূর্ব সেবা দান করছে। কম্পিউটার-এর সাহায্যে মুহূর্তে যাবতীয় কাজকর্ম সমাধা করার সুযোগ করে দিচ্ছে। 
 
চূড়ান্ত পরিণতি ও মানুষ : বিজ্ঞানের আজ চূড়ান্ত উন্নতি ঘটেছে। মানুষ বৈজ্ঞানিক কলাকৌশলের সাহায্যে দূরত্ব জয় এবং কালের গতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। মহাকালের বুকে মানুষ এঁকে দিচ্ছে তার বিজয়ী পদচিহ্ন। বিজ্ঞান আজকের মানুষের শক্তি ও সামর্থ্য উভয়ই। বিজ্ঞান মানুষের হাতে তৈরি হলেও এটি মানবসমাজ ও সভ্যতার জন্য প্রচণ্ড হুমকি সৃষ্টি করে রেখেছে। পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র এবং যুদ্ধবিদ্যার প্রসারতা বর্তমান বিশ্বে এক চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কবির ভাষায় বলতে গেলে- 
“হিঃসায় উন্মুক্ত পৃথ্বী 
নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব 
ঘোর কুটিল পন্থ তাহার লোভ জটিল বন্ধ।” 
আজকের যুগে যুদ্ধ দানবের মোকাবেলায় শান্তি সংগ্রামে বিশ্ববাসী যোগদান করতে বাধ্য হচ্ছে। 
 
উপসংহার : স্বার্থসংঘাতের ডামাডোলে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগে গোটাবিম্ব ধ্বংস হয়ে যাক- এটিকারও কাম্য নয়। আমরা কামনা করি বিজ্ঞানের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার। অন্তহীন সমস্যা ও সংকট উত্তরণে বিজ্ঞানের সমস্ত শক্তিকে প্রয়োগ করা হোক। আমরা চাই সংকল্পের উজ্জ্বলতায় আসুক জ্যোতির্ময় সুখ শান্তির পথ। 
“তাই প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল 
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি 
নব জাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”
Like
1
Patrocinado
Atualizar para Plus
Escolha o plano que é melhor para você
Leia mais