Commandité

ডিজিটাল বাংলাদেশ - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দিন বদলের পালায় বাংলাদেশ

ভূমিকা : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৭১ সালে। তারপর থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে গড়ে তোলার সংগ্রাম শুরু। স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও আমরা উন্নয়নশীলতার গণ্ডি থেকে বের হতে পারি নি। আসে কি আশানুরূপ অগ্রগতি। এর পেছনে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে আমাদের আলস্য, নৈতিকতার অভাব, কাজের চেয়ে বেশি কথা বলার প্রবণতা এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অগ্রসর না হওয়া ইত্যাদি। ফলে আমাদের সবকিছুই হচ্ছে মন্থর গতিতে। এই মন্থরতা কাটিয়ে দেশের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা সৃষ্টিতে ডিজিটাল পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। ডিজিটাল পদ্ধতি বাংলাদেশের সকল কর্মকাণ্ডের সাথে ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার সংযুক্ত হলেই গড়ে ওঠবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
 
ডিজিটাল বাংলাদেশ কী? : আমাদের প্রধানমন্ত্রি বাংলাদেশকে ২০২০ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ডিটিজাল বাংলাদেশ বলতে আমরা সংক্ষেপে যা বুঝতে পারি তা হলো- সারা দেশে কর্মকাণ্ডকে আধনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সিস্টেমের মাধ্যমে অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিয়ে গতিশীল করে তোলা। সরকারি অফিস-আদালত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, রাজপথ ও হাইওয়ে রোডগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে কম্পিউটারের ইন্টারনেট সিস্টেমে এক জায়গায় বসে বাংলাদেশের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। অর্থাৎ সমগ্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড এবং বহির্বিশ্বেকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জিত হবে, তাকেই আমরা বলতে পারি ডিজিটাল বাংলাদেশ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করাকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।
 
শিক্ষা ক্ষেত্রে : শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের লেকচার বা বক্তব্য ভিডিও করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেওয়ালে সাদা পর্দায় তা প্রদর্শন করা যায়। এটি শিক্ষাথৃীদের মনোযোগ আকর্ষণের সহজ পদ্ধতি। কোনো শিক্ষকের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলেও এ পদ্ধতিতে সহজে কাজ সম্পন্ন হতে পারে। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে এ পদ্ধতিতে ঘরে বসেও শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। নিজস্ব বই না থাকলেও, লাইব্রেরিতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না- ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট থেকে খুঁজে নিয়ে তা পড়ে ফেলা যায়। এভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষ বয়ে আনতে পারে। তবে একে সর্বজনীন করার জন্য ব্যাপক সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
 
চিকিৎসা ক্ষেত্রে : চিকিৎসা নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞান এক নতুন বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের সাধনায় একদিকে যেমন আবিষ্কৃত হযেছে নাা জটিল রোগের ঔষধ, তেমনি চিকিৎসার পদ্ধতিও ক্রমে ক্রমে সহজ হয়ে আসছে। এক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হলে ডাক্তারের কাছে সরাসরি উপস্থিত না হয়ে ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করে ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা যায়। যেকোনো ধরনের শারীরিক সমস্যায় ঘরে বসে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। বিষয়টি সরকারি উদ্যোগে সর্বজনীন হয়ে উঠলে এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
 
কৃষিক্ষেত্রে : বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৯০ জন লোক কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে উদ্ভাবিত হয়েছে উন্নত জাতের বীজ, পরিবেশ বাবন্ধব সার ও উচ্চ ফলনশীল প্রজাতির শস্য। অনাবৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাও উদ্ভাবিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকসমাজ অধিকাংশ নিরক্ষর হওয়ার কারণে সবকিছুর সফল ব্যবহার করতে পারছে না। তাই কৃষকদের যথার্থ প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত করে তুলতে পারলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়েভসাইট থেকে নানা বিষয় জেনে নিয়ে তা কাজে লাগাতে পারে। তাহলে এক্ষেত্রেও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠতে পারে।
 
অফিস-আদালতে : বাংলাদেশের অধিকাংশ অফিস-আদালতে কাজের গতি অত্যন্ত মন্থর এবং সর্বক্ষেত্রে ওঁৎ পেতে আছে দুর্নীতির কালো থাবা। অফিসগুলোতে সি সি ক্যামেরা স্থাপন করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় এনে একস্থানে বসে প্রশাসনকে গতিশীল, কর্মমুখি ও দুর্নীতিমুক্ত করা যায়। এ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে চালু করা হলে কেউ আর অফিসে বসে কাজ রেখে আরামপ্রিয়-মগ্ন হবে না এবং ঘুষ-দুর্নীতির সন্ধানে ব্যস্ত রাখবে না নিজেকে। তখনই কুশাসনের পরিবর্তে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং গড়ে উঠবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।

নিরাপত্তা বিধানে : নিরাপত্তা সর্বক্ষেত্রেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে জাতির কোনো নিরাপত্তা নেই সে জাতি কখনোই উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। এক্ষেত্রে সি সি ক্যামেরা স্থাপন ও ইন্টারনেটের সাথে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সংযোগ সাধন করে নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব। কেননা, দুষ্কৃতিকারীরা কোনো অঘটন ঘটিয়ে সাময়িকভাবে পালিয়ে গেলেও পরবর্তীকালে ক্যামেরার বদৌলতে ধরা পড়তে বাধ্য। এর জন্য যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়, তবে অন্যরাও এ কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেবে। নিশ্চিত হবে জাতির নিরাপত্তা। আর জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই গতিশীল হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
 
ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে : ক্রয়-বিক্রয় মানুষের জীবনে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কেনার জন্য প্রতিদিনই আমাদের হাটে বাজারে বা কোনো শপিংমলে যেতে হয়। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটানো হলে ঘরে বসে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে এবং বর্তমানে সীমিত আকারে তা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পছন্দ করা, দাম-দস্তুর করা এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করে দ্রব্যসামগ্রী ঘরে বসে পেয়ে যাওয়া সবই সম্ভব। শুধু দেশই নয়, বিদেশের সাথেও একটি কার্যকর হবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে চালু হলেই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
 
যোগাযোগের ক্ষেত্রে : যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল না হলে দেশের সার্বিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমানে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেককিছুই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বিশেষ করে আকাশ পথ এখন কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রহে রকেট উৎক্ষেপণ করা হলে যোগাযোগ থাকছে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে। নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সমুদ্র পথ। মুহূর্তের মধ্যে একদেশের সাথে আরেক দেশের যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সারা দেশকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা যায়।
 
প্রকাশনার ক্ষেত্রে : প্রকাশনার ক্ষেত্রে অনেক আগেই কম্পিউটার সিস্টেম চালু হয়েছে আমাদের দেশে। আগে যে বইটি ছেপে বের হতে দু মাস সময় লাগত, বর্তমানে তা দু দিনেই সম্ভব। বাংলাদেশের কোনো বাংলা  বই বিদেশ থেকে প্রকাশ করতে চাইলে এখন আর কোনো সমস্যাই নেই। সবকিছু ফাইনাল করে কয়েক মিনিটের মধ্যে তা নির্ধারিত দেশে পাঠিয়ে দেওয়া যায় এবং সে দেশের কোনো বই এ পদ্ধতিতে নিয়ে এসে আমাদের দেশে দ্রুত গতিতে প্রকাশ করা যায়।
 
সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে : সংবাদপত্রে ক্ষেত্রে কম্পিউটার এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি সংবাদপত্র একই সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই এখন আর ঢাকা থেকে যানবাহনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী বা সিলেটে পত্রিকা পাঠাতে হচ্ছে না। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির পত্রিকাগুলোর ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা কার্যকরী হচ্ছে। আবার বিদেশি পত্রিকাগুলো আমরা পড়তে পারছি ইন্টারনেটের মাধ্যমে। অনেক আগের পত্রিকাও খুঁজে বের করে নেওয়া যাচ্ছে ওয়েবসাইট থেকে।
 
বিনোদনের ক্ষেত্রে : বিনোদনের ক্ষেত্রে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। খেলাধুলা, সিনেমা ইত্যাদি থেকে শুরু করে নানা ধরনের আনন্দ উপভোগ করা যাচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে। খেলা যাচ্ছে নানা ধরনের গেম। ইন্টারনেটের সাহায্যে অন্য কোনো দেশে চলমান খেলার ফলাফল মুহূর্তের মধ্যেই জানা যাচ্ছে।
 
ব্যাংক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে : কম্পিউটার সিস্টেম ব্যাংক ব্যবস্থাকে গতিশীল করে তুলেছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংকে চালু হয়েছে অনলাইন সিস্টেম। এখন আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বা দূর দূরান্তের কোনো জেলায় নগদ টাকা বহন করে নিয়ে যেতে হয় না। কম্পিউটারের সাহায্যে অনলাইন ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে তা সমাধা করা যায় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। একজনের হিসাব থেকে অন্য কারও হিসেবে মুহূর্তের মধ্যে টাকা পাঠানো যায়। সকল ব্যাংক এ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে গড়ে উঠবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
 
অনলাইন তথ্য কেন্দ্র স্থাপন : বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি তথ্যসেবা জনসাধারণের দোর-গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব অনলাইন তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে। এসব তথ্যকেন্দ্র থেকে মানুষ বিভিন্ন ডাটা বা তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। জানতে পারবে সর্বশেষ প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা ও অবস্থান। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন প্রতিটি উপজেলায় সার্ভার স্টেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এ সার্ভার স্টেশন চালু হলে ভোটাররা তাদের নিজ উপজেলায় বসে নতুন ভোটার হওয়া, ভুল সংশোধন, পরিবর্তনসহ যাবতীয় তথ্য আপডেট করতে পারবে। অন্যান্য সেক্টরেও এ ধরনের সার্ভার স্টেশন চালু হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ওঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে।
 
উপসংহার : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। দেশটিকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হলে সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আর উন্নয়ন ঘটাতে হলে কাজের কোনো বিকল্প নেই। কাজের মধ্যদিয়েই ভালোবাসতে হবে দেশকে। প্রশাসনকে করে তুলতে হবে কার্যকর ও গতিশীল। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে হবে। তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
Like
1
Commandité
Mise à niveau vers Pro
Choisissez le forfait qui vous convient
Lire la suite